WB Krishak Bandhu Scheme: পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্য সাথী, কর্মসাথী–এর পাশাপাশি কৃষকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্কিম হল কৃষক বন্ধু প্রকল্প (Krishak Bandhu Scheme)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের সূচনা করেন, এবং ২০২১ সালে এতে বড় পরিবর্তন এনে কৃষক ভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়।
বর্তমানে ২০২৪ সালে এই প্রকল্প আবার নতুনভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, কারণ অনেক কৃষকই তাদের ভাতা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কৃষক বন্ধু প্রকল্প সম্পর্কিত প্রতিটি তথ্য সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছি—কি সুবিধা পাওয়া যায়, কারা আবেদন করতে পারেন, কী কী কাগজপত্র লাগবে, এবং অনলাইনে ঠিক কীভাবে আবেদন করবেন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (Overview of Krishak Bandhu Scheme)
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| প্রকল্পের নাম | কৃষক বন্ধু প্রকল্প |
| চালু রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
| শুরু | ১ জানুয়ারি ২০১৯ |
| চালু করেছেন | মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
| বিভাগ | কৃষি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
| বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪-এ সক্রিয় |
| কারা আবেদনযোগ্য | ১৮–৬০ বছর বয়সী কৃষক |
| সুবিধা | বছরে ৪,০০০ বা ১০,০০০ টাকা কৃষি ভাতা |
| স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | Official Portal |
| অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | krishakbandhu.net |
কৃষক বন্ধু প্রকল্প কি? (What is Krishak Bandhu Scheme?)
রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চাষের মৌসুমে কৃষকদের আর্থিক চাপ কমাতে সরকার এই প্রকল্প শুরু করে। প্রথমদিকে কৃষকদের জন্য বছরে ৫,০০০ টাকা ভাতা নির্ধারণ ছিল, কিন্তু ২০২১ সালে তা বাড়িয়ে ১ একরের বেশি জমির জন্য বছরে ১০,০০০ টাকা এবং ১ একরের কম জমির ক্ষেত্রে বছরে ৪,০০০ টাকা করা হয়।
এই প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল—
যদি কোনো কৃষক ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে থাকেন এবং দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা যান, তাহলে তার পরিবার ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে।
এই কারণে পশ্চিমবঙ্গের কৃষক মহলে কৃষক বন্ধু স্কিম অতি জনপ্রিয় একটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা (Benefits of Krishak Bandhu Scheme)
এই প্রকল্পে আবেদন করলে কৃষকরা যে সুবিধাগুলি পাবেন—
১. বার্ষিক কৃষি ভাতা
- ১ একরের কম জমি: বছরে ৪০০০ টাকা
- ১ একর বা তার বেশি জমি: বছরে ১০,০০০ টাকা
রবি (শীতকাল) ও খরিফ (বর্ষা) মৌসুম ধরে বছরে দুটি কিস্তিতে টাকা দেওয়া হয়।
২. অকালমৃত্যু বীমা সুবিধা
যদি কোনো কৃষক ১৮–৬০ বছরের মধ্যে হঠাৎ মারা যান, তার পরিবার পাবে:
- ২,০০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ
এই সুবিধা অন্য কোনো রাজ্যে এভাবে দেওয়া হয় না।
৩. সমস্ত কৃষকের জন্য সমান সুযোগ
নিজস্ব জমি থাকুক বা না থাকুক—
যদি বৈধ নথি থাকে,
উত্তরাধিকারসূত্রে জমি পেয়ে থাকেন,
অথবা ভাগচাষী হন—
সবাই আবেদন করতে পারবেন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কারা আবেদন করতে পারবেন? (Eligibility Criteria)
✔️ নিজের নামে চাষযোগ্য জমির দলিল, পর্চা বা বন বিভাগের পাট্টা থাকতে হবে।
✔️ যদি কৃষক মারা যান, তার উত্তরাধিকারীরা আবেদন করতে পারবেন।
✔️ ভাগচাষীরাও আবেদন করতে পারেন, যদি জমির মালিকের কাগজপত্র থাকে।
✔️ আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্লকের হওয়া প্রয়োজন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কারা আবেদন করতে পারবেন না? (Who Cannot Apply)
❌ জমির বৈধ দলিল বা পর্চা নেই
❌ উত্তরাধিকারীর সার্টিফিকেট নেই
❌ আধার কার্ডের ঠিকানা যেখানে, সেই ব্লকের বাইরে জমি থাকলে
❌ জনধন অ্যাকাউন্ট থাকলে (ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবশ্যই সেভিংস হতে হবে)
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (Documents Required)
- জমির পর্চা/দলিল/নথি
- আধার কার্ড
- ভোটার কার্ড
- ব্যাংক পাসবুকের প্রথম পৃষ্ঠা (জনধন অ্যাকাউন্ট নয়)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ঠিকানার প্রমাণপত্র
- উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রে—ওয়ারিশ সার্টিফিকেট
কিভাবে আবেদন করবেন? (How to Apply for Krishak Bandhu Scheme)
অফলাইন পদ্ধতি
অফলাইনে আবেদন করতে হলে নিকটবর্তী
দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে
যোগাযোগ করতে হবে।
সেখানে—
- প্রধান ফর্ম
- দুটি অতিরিক্ত সহায়ক ফর্ম
দেওয়া হয়।
যদি ক্যাম্পে ফর্ম না পাওয়া যায়,
তাহলে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি
অনলাইন আবেদন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন—
1️⃣ অফিসিয়াল সাইটে যান: krishakbandhu.net
2️⃣ ‘Registration’ অপশন সিলেক্ট করুন
3️⃣ মোবাইল নম্বর ও ইমেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন
4️⃣ মোবাইলে আসা OTP দিন
5️⃣ একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবেন
6️⃣ লগইন করুন
7️⃣ আবেদন ফর্ম মনোযোগ সহকারে পূরণ করুন
8️⃣ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস JPEG ফরম্যাটে আপলোড করুন
9️⃣ শেষে ‘Final Submit’ ক্লিক করুন
স্ট্যাটাস কিভাবে চেক করবেন? (Krishak Bandhu Status Check)
স্ট্যাটাস চেক করার ধাপ:
1️⃣ অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান
2️⃣ লগইন করুন
3️⃣ Dashboard → Status Check
4️⃣ আধার বা ভোটার কার্ড নম্বর দিন
5️⃣ টাকা কবে ঢুকবে, কোন পর্যায়ে আবেদন—সব দেখতে পাবেন
কৃষকদের সাধারণ কয়েকটি প্রশ্ন (FAQ)
১. কৃষক বন্ধু স্ট্যাটাস কিভাবে চেক করব?
krishakbandhu.net ওয়েবসাইটে গিয়ে আধার বা ভোটার কার্ড নম্বর দিয়ে।
২. কৃষক বন্ধু করতে কোন কোন কাগজ লাগে?
জমির নথি, আধার, ভোটার, ব্যাংক পাসবুক, ছবি, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট।
৩. দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কবে ঢোকে?
- রবি মৌসুম → নভেম্বর
- খরিফ মৌসুম → জুন
৪. টাকা ঢুকেছে কিনা কিভাবে জানবো?
স্ট্যাটাস চেক অপশন থেকেই টাকা জমা হয়েছে কিনা দেখা যায়।
সমাপ্তি
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্প এখন রাজ্যের প্রায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের জন্য আর্থিক ভরসা হয়ে উঠেছে। বছরে ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা ভাতা, তার সঙ্গে অকালমৃত্যুতে ২ লক্ষ টাকার বীমা—এ প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী করেছে।
চাষিদের জন্য এই সহায়তা শুধু ভাতা নয়, বরং কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় একটি আর্থিক সহায়তা। তাই যাদের এখনও আবেদন করা হয়নি, তাদের যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আপনার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় লিঙ্কগুলি নিচে দেওয়া হলো—
👉 অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: krishakbandhu.net
👉 রেজিস্ট্রেশন: Online Registration
👉 স্ট্যাটাস চেক: Application Status


